জীবনের শেষ পরিণতি

13/02/2013 00:19

প্রকাশ ল্যারী কোড়াইয়া
হঠাৎ থমকে দাঁড়াল আবুল মিয়া! কে যেন তাকে পেছন থেকে ডাকছে। পেছনে তাকিয়ে দেখে মোসতাক খুব দ্রুত তার দিকে এগেিয় আসছে।

মোসতাক:
শুনছেন নি মিয়া ভাই?
আবুল মিয়া: প্যাঁচাল না পাইড়া কি হইছে তাই ক দেহি।
মোসতাক: কাইল রাইতে শান্তিপুর গ্রামে একটা খুন হইছে।
আবুল মিয়া : মানুষটা কেডা চিনছস্ নাকি?
মোসতাক : চিনবার কোন উপায় রাখে নাই। কুবাইয়া সারা শরীর টুকরা টুকরা কইরা ফালাইছে।
আবুল মিয়া : খুব খারাপ একটা খবর দিলিরে মোসতাক।
মোসতাক আবুল মিয়ার কানের কাছে একটু নিচু স্বরে বলল, মিয়া বাই কি এই ঘটনার ব্যাপারে কিছু জানেন নাকি?
আবুল মিয়া : ঐ হারামজাদা কি কইলি তুই?
মোসতাক : না মানে আমার তো অনেক কিছুই....
বলেই থেমে যায় মোসতাক।
আবুল মিয়া আর মোসতাক এই দু’জনের মধ্যে খুব ঘনিষ্ট সম্পর্ক। আবুল মিয়া মোসতাকের চেয়ে বয়সে বেশ বড়। তবে বয়সের ব্যবধানে দু’জনের মেলামেশার যে পার্থক্য থাকা দরকার তা তাদের দু’জনের মধ্যে নেই। কারণ আবুল মিয়া যেসব কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকে তার সবটাই মোসতাকের কুবুদ্ধিতে আর সহায়তায় হয়ে থাকে।

আবুল মিয়া এমন একজন ব্যক্তি, এমন কোন অপকর্ম নেই যা সে করে নি। অনেকেরই অকাল মৃত্যুর কারণ এই আবুল মিয়া। রাতের আঁদারে ধর্ষণ, পরকীয়া, ডাকাতি, জোরপূর্বক অন্যের জমি দখল- তার নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললেই সেই ব্যক্তির কথা বলার শক্তি চিরতের কেড়ে নেয়া হয়। আর এই কাজগুরো সে খুব ঠান্ডা মাথায় করে, যাতে তাকে বড় দরণের কোন ঝামেলা পোহাতে না হয়। আবুল মিয়া তার স্ত্রী কখনো তাকে জিজ্ঞেস করতে সাহস পায় না সে কেন এত রাতে নেশাগ্রস্থ হয়ে বাড়ি ফেরে; কারণ সে ভালো করেই জানে যে লোকটিকে এই সব প্রশ্ন করলেই তাকে অকথ্য গালাগালি আর মার খেতে হবে। কিছু সন্ত্রাসী আর জঘন্য চরিত্রের লোক বাদ দিলে গ্রামের যারা বাকি থাকে অর্থাৎ ভিতরে সামান্য মনুষ্যত্ববোধ আছে তারা সকলে আবুল মিয়াকে ভীষণ ঘৃণা করে। শুধু মুখে কিছু বলতে পারে না। কারণ তারা জানে এই লোকের বিরুদ্ধে কিছু বললেই তাদের বিপদে পড়তে হবে।

আবুল মিয়ার বাড়ি হচ্ছে যত খারাপ লোকের আস্তানা। দিন নেই, রাত নেই সবসময়ই তার বাড়িতে নানা রকম আলোচনা চলতে থাকে। কার কিভাবে ক্ষতি করা যায় তা নিয়ে সবসময় তাদের মধ্যে কথা চলতে থাকে। আবুল মিয়ার স্ত্রী এসব পছন্দ করে না, অবশ্য একজন ভালো মানুষের পক্ষে এইসব আজেবাজে কথা পছন্দ হওয়ার কথাও না। তার স্ত্রী তার ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে হলেও আবুল মিয়াকে খারাপ কাজ করতে বারণ করে, অনেক ভালো উপদেশ দিয়ে তাকে সুপথে আনার চেষ্টা করে। আর তার বিনিময়ে তাকে পেতে হয় মানসিক আর শারীরিক নির্যাতন।

শেরপুর গ্রাম সেই সাথে আশেপাশের আট দশটি গ্রামে আবুল মিয়ার মত কুচরিত্রের এমন ভয়ংকর লোক খুজে পাওয়া দুষ্কর। শান্তিপুর গ্রামে যে লোকটিকে খুবন করা হয় তার নাম হেকমত।  আর এই লোকটিকে আবুল মিয়ার ষড়যন্ত্রে খুন করা হয়েছে। আবুল মিয়ার সাথে হেকমতের দীর্ঘদিন যাবৎ জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মামলা চলছিল। সেই মামলার জের ধরেই হেকমতকে খুব ঠান্ডা মাথায় খুন করে আবুল মিয়ার লোকেরা। শুধু এই খুনটি করাতে আবুল মিয়া মোসতাকের সাহায্য নেয়নি। তার কারণ হচ্ছে মোসতাককে দিয়ে খুনটি করালে তার বিনিময়ে অনেক বড় অংকের টাকা গুণতে হতো আবুল মিয়াকে।

দু’মাস পর...
জানালার ফাক দিয়ে সকালের মিষ্টি রোদ এসে চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙ্গে যায় সুমনের। হাত মুখ ধুয়ে, চা নাস্তা শেস করে রওনা হয় বাজারের উদ্দেশ্যে। বাজারে যাবার পথে রাস্তায় ঘন জঙ্গলের পাশে বেশ কিছু রোক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সেখানে এগিয়ে যায় সুমন। সেখানে যেতেই দেখতে পেল একটি লাশ পড়ে আছে।একটু ভালোভাবে লক্ষ্য করতেই বুঝতে পারে লোকটি আর কেউ নয়, আবু মিয়া। সারা শরীর ছঁড়ির আঘাতে ক্ষত বিক্ষত। রক্তে লাল হয়ে আছে তার দেহ। একটি লোক আরেকটি লোকের কানের কাছে নিচু স্বরে বলতে লাগল, “আল্লাহ্ যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন।” সুমনের পাশে দাঁড়ানো এক লোক জোরে কাশি দিয়ে বলল, “এই বার গ্রামের মানুষরা একটু শান্তিতে ঘুমাইতে পারব।” সুমনের আজ আর বাজারে যাওয়া হলো না। সেখানে থেকেই সে সরাসরি বাড়িতে এসে পড়ল। বাজারের ব্যাাগ রেখে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল। “কিরে কি হয়েছে তোর, বাজারে গেলি না যে?” জিজ্ঞেস করল সুমনের মা। “না তেমন কিচু হয়নি, এমনি ভালো লাগছে না।” সুমন ওর মার কাছে আবুল মিয়া নিশ্চয়ই ওর মা এগুলো নিয়ে খামাখা দুশ্চিন্তা কতে থাকবে। তাই আর কোন কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে পড়ল বন্ধুদের সাথে দেখা করতে। সুমন কিছু পথ হেটে ফজরের চাযের দোকানে এসে দেখতে পেল ওর দুই বন্ধু সজীব আর নির্জর বসে আছে। সুমনকে দেখে নির্ঝর ও সজীব তিন কাপ চায়ের অর্ডার দিল। সুমন বলল, “চা খাব নারে দোস্ত”। “কেন রে কি হয়েছে? মন খারাপ?” সুমন বলল “ঘুম থেকে উটে নাস্তা খেয়ে বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম; কিন্তু আর যাওয়া হলো না। সকাল বেলাতেই খুব ভয়ংকর দৃশ্য দেকতে হলো আমাকে।” তারপর বন্ধুদের কাছে সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলল। সব কথা শোনার পর আবুল মিয়াকে নিয়ে তিন বন্ধুর মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ সমালোচনা চলাল। প্রায় দুই ঘন্টা পর ওদের আলোচনার একটা সমাপ্তি টেনে আনে সুমন। সুমন বলল, “যা হবার তা তো হয়ে গেছে, এখন আর এই মরা মানুষকে নিয়ে কথা বাড়িয়ে কোন লাভ নেই। তার চেয়ে চল আমরা বাড়ি  চলে যাই। সাড়ে তিনটায় আমাদের প্রাইভেট পড়তে যেতে হবে। তিন বন্ধুই যার যার বাড়ির উদ্দেশ্যে উঠে পড়ল।

স্যারের বাড়ি যেতেই স্যার বরলেন, “আমার শরীরটা ভালো লাগছে না, আজ আর তোমাদের পড়াবো না। আগামীকাল ঠিক সময়ে পড়তে আসবে।” স্যারের বাড়ি থেকে ওরা তিন বন্ধু সরাসরি রওনা হলোম াঠের উদ্দেশ্যে। মাঠে যাওয়ার পথে সেই রাস্তা অতিক্রম করতে হয়, যেখানে আবুল মিয়ার লাশ পড়ে আছে। সেই স্থানে এসে ওরা তিন বন্ধু কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। এখনো আবুল মিয়ার লাশটিকে দাফন করা হয়নি; এখনো আগের অবস্থায় পড়ে আছে। লাশের গায়ে রক্ত শুকিয়ে কালো হয়ে গেছে। সুমন বলে উঠল, “আবুল মিয়ার লাশটিকে কেউ দাফন করবে না। চল, আমরা তিন বন্ধু মিলে কোন একটা ব্যবস্থা করি।” সুমনের কথায় সজীব আর নির্ঝর কোন মতেই সায় দিতে পারল না। সুমন বলল, জীবিত অবস্থায় লোকটি খুব খারাপ ছিল- খুব খারাপ বললে ভুল হবে জঘন্য খারাপ ছিল; কিন্তু এখন তো লাশ হয়ে পড়ে আছে। চাইলেও কারো কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আমরা যদি এর দাফনের কোন ব্যবস্থা না করি তাহলে নিশ্চিত যে, অন্য কোন রোক একে স্পর্শ করেও দেখবে না।” অনেক বোজানোর পর সুমনের কথায় রাজি হলো ও দুই ব্ধু। খুব তাড়াতাড়ি তিন বন্ধু মিলে দাফনের জন্য প্রাথমিক কাজগুলো শেষ করল, কিন্তু লাশটিকে বহণ করে গোরস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য আরেকজন লোক অবশ্যই প্রয়োজন। ফজলকে রাজি করাতে তেমন কোন বেগ পেতে হয়নি ওদের। কারণ ফজল খুব সহজ-সরল একজন মানুষ আর বয়সে সুমনদের চেয়ে বেশ বড় হলেও ওদের মধ্যে একরকম বন্ধুত্বপুর্ণ সম্পর্ক। লাশটিকে দাফন করতে নিয়ে যেতে প্রায় ছয়টা বেজে গেল। এলাকার গোরস্থান বেশ দূরে হওয়ায় ওরা লাশটিকে দিয়ে দ্রুত হাটতে শুরু করল।

তখন পশ্চিমের আকাশে সূর্য হেলে পড়েছে, ধীর ধীরে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে চারিদিক। আবুল মিয়া এমনিতে বেশ হালকা পাতলা গড়নের হওয়ায় শরীরের ওজন একটু কম; কিন্তু তার লামটির ওজন এখন বেশ ভারী মনে হচ্ছে। ওরা চারজনই তা অনুভব করল, কিন্তু মুখে কেউ কিছু বলল না। ফজল জোরে একটা কাশি দিয়ে বলল, “মনে হয় তিনারা ভর করছেন” (ফজলের কথা শুনে নির্জর ও সজীব বেশ ভয় পেয়ে গেল। ওদের দিকে তাকিয়ে ওদের অবস্থা বুঝতে পারল তাই ওদের ভয় ভাঙ্গানোর জন্র ফজল বলে উঠল, “এটা তেমন কিছু না। যাদের অপমৃত্যু হয় তাদের ক্ষেত্রে অনেক সময় এমনটা হতে পারে। এমনিতেই আবুল মিয়া জঘন্য খারাপ লোক ছিল তার উপর আবার অপমৃত্যু।” কথাগুলো বেশ স্বাভাবিকভাবে বলতে পারলেও তার সারা শরীর কেপে কেপে উঠল। সুমন ওদের মধ্যে চিল সবচেয়ে সাহসী তাই ওর কাছে ব্যাপারটা তেমন কোন ভয়ের মনে হচ্ছিল না।

গোরস্থানের পাশে একটা পরিত্যক্ত বাড়ি। সেই বাড়িতে বেশ কয়েক বৎসর যাবত কোন লোকজন থাকে না। সেখানে এসে ওরা চারজন লাশটিকে নামালো। দাফন কার্যের জন্য ওদের কাছে মোটামুটি সব ধরনের সরঞ্জাম ছিল, শুধু কোদাল আনতে ভুলে গিয়েছিল। গোরস্থানের আশে পাশে কোন বসত বাড়ি না থাকায় একটু দূরে এক গ্রাম থেকে কোদাল আনার জন্য দ্রুত চলে গেল নির্ঝর আর সজীব। যে কোন গ্রামে একজন লোকের মৃত্যু হলে গ্রামের অনেক লোকই তার দাফনের জন্য এগিয়ে আসে। আবুল মিয়া খারাপ লোক হওয়ায় তার মৃত্যুতে কোন মানুষই এগিয়ে আলো না। দুই বন্ধুসহ সুমন এবং ফজল এগিয়ে না আসলে হয়ত আবুল মিয়ার লাশ কেউ স্পর্শ করেও দেখতো না।
সজীব ও নির্ঝর চলে যাওয়ার পর ওরা দু’জন লাশটিকে সেই পরিত্যক্ত বাড়ির ভেতের ঢুকালো। পাশে একটি হারিকেন জ্বালিয়ে বসে রইল ওরা দু’জন। একটু পরেই নামতে শুরু করল বৃষ্টি। ফজল সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ধরালো। সিগারেটের দু’ট্ োটান দিয়ে লাশটির দিকে তাকালো। লাশটিকে কেনম যেন অস্বাভাবিক ভয়ংকর মনে হচ্ছিল। বৃষ্টির সাথে সাথে দমকা হাওয়া বইতে ও বৃষ্টির বেগ ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করল। ফজল তখন সুমনকে বলল, “আমি একটু বাইরে থেকে আসি, তুমি বসো।” সুমন জিজ্ঞেস করল, “এত বৃষ্টির মধ্যে কোথায় যাও তুমি?” ফজল বলল, আমি যাবে আর আসবো। ফজল এতই ভয় পেয়ে গিয়েছিলো যে প্রচন্ড বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে বাড়ির পথে রওনা হলো; কিন্তু সুমনের কথা সে একবারও ভাবল না যে এই পরিত্যক্ত বাড়িতে একটা লাশের সাথে একা কিভাবে থাকবে। বেশ কিছুক্ষণ পার হয়ে গেল কিন্তু ফজল আর ওর দুই বন্ধু তখনও ফিরে এল না। সুমমন ভাবতে লাগল হয়ত ওরা কেউ ফিরে আসবে না। বৃষ্টি বাড়ছে সেই সাথে রাতও বাড়ছে। এসব ভাবতে ভাবতে কেমন যেন ভয় কাজ করতে লাগল সুমনের ভিতরে, লাশটির দিকে একটু তাকাতেই আতকে উঠল সুমন। লাশের দু’চোখ খোলা, উঠে বসে আছে আর ঘোলাটে চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ঠিক তখনই দুটো হিং¯্র জানোয়ার ঘরের ভেতর ঢুকতে লাগল, চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে, এগিয়ে যাচ্ছে আবুল মিয়ার দিকে। এই সব দৃশ্য দেখে সুমনের শরীর অবশ হয়ে উঠতে লাগল। জোরে চিৎকার করবে তারও কোন উপায় নেই, শরীরে কোন শক্তি পাচ্ছে না সে। আর ওর মনে হচ্ছিল কেউ যেন ওর কথা বলার শক্তি কেড়ে নিয়েছে। যত সূরা আর কালাম জানা ছিল সবই বলে যাচ্ছিল মনে মনে। অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়াল সে। আর কোনদিকে না তাকিয়ে ঘর থেকে বের করে সোজা এক দৌড়। দৌড়াতে দৌড়াতে এক ধান ক্ষেত্রের পাশে এসে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল।

যখন সুমনের জ্ঞান ফেরে তখন বুঝতে পারে ওকে ওদের বাড়ির উঠানে শুয়ে রাখা হয়েছে। ওর মাথার কাছে ওর মা-বাবা বসে আছে আর তার পাশেই দাড়িয়ে আছে ওর দুই বন্ধু এবং ফজল। ওদের কথোপকথন থেকে সুমন জানতে পারে বৃষ্টি থেকে যাওয়ার পর ওরা বন্ধুরা সেই গোরস্থানে ওকে খুজে না পেয়ে নিজেদের বাড়ির দিকে দ্রুত রওনা হয়। বাড়িতে আসার পথে একটা ধান ক্ষেতে ওকে অজ্ঞান অবস্থায় পায় ওরা।
পরদিন সকাল বেলা সেই গোরস্থানে গিয়ে আবুল মিয়ার লাশটি পাওয়া গেল না, পাওয়া গেল শুধু রক্তে মাখা কয়েক টুকরো কাপড়। হায় রে জীবন। জীবিত অবস্থায় যে সবার মাটি কেড়ে নিয়েছে, মৃত্যুর পর তিন হাত মাটিও জুটল না তার কপালে- এই তার জীবনের শেষ পরিণতি!